বিশ্বাস ও ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক: জাবির (রাঃ) ও নবীজী (সঃ)
জাবির রাঃ-এর বাবা আবদুল্লাহ (রাঃ) উহুদের যুদ্ধে প্রথম শহীদ হন। রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সাথে সরাসরি কথা বলেছেন। আল্লাহ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি কি চাও?” আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেছিলেন, “আবার পৃথিবীতে ফিরে যেতে চাই এবং আবারও আপনার রাস্তায় শহীদ হতে চাই।” এরপর শহীদদের রিযিক নিয়ে কুরআনের আয়াত নাজিল হয়। আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর মৃত্যুর সময় তাঁর পুত্র জাবিরের বয়স ছিল ১৭ কিংবা ১৮। পিতা তখন পুত্রকে ডেকে বলেছিলেন, “বাবা, আমার মনে হয় কালকেই মারা যাব। তোমার ৯ বোনকে রেখে যাচ্ছি, তুমি তাদের দেখে রেখো।” ওমর (রাঃ) বলেছিলেন, “মুমিনের অনুমানে সতর্ক থেকো, বেশিরভাগ মুমিনের অনুমান সঠিক হয়।” আমরা সালাফদের ইতিহাসে প্রায়ই দেখতে পাই, তাঁরা মৃত্যুর বিষয়ে আগেভাগে বলে দিতেন। সম্ভবত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার পক্ষ থেকে অন্তরের বার্তা ছিল এটি।
ঠিক পরের দিন পিতা আবদুল্লাহ (রাঃ) মারা যান।এর ১০ মাস পর জাবির (রাঃ) আরেকটি যুদ্ধ শেষে মদিনায় ফিরছিলেন। তখন উনার মন খুবই খারাপ, সঙ্গে রয়েছে দুর্বল উট। উটটি এতটাই দুর্বল ছিল যে তিনি সবার শেষে পড়ে রইলেন। কেউ যেন তাঁকে ডাকছেন। কাছে এসে দেখলেন, স্বয়ং রসুলুল্লাহ (সঃ) জাবিরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
জাবির (রাঃ) এবং রসুলুল্লাহ (সঃ)-এর কথোপকথন:
“মন খারাপ কেন তোমার, জাবির?” জিজ্ঞেস করলেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি-ওয়া সাল্লাম।
“ইয়া রসুলুল্লাহ (সঃ), আপনি তো জানেন, আমার পিতা মারা গেছেন গত কিছুদিন আগে। রেখে গেছেন প্রায় নয়টি ছোট ছোট বোন। আমার এই দুর্বল উট ছাড়া তেমন কিছুই নেই।”
“বিয়ে করেছো?” রসুলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞাসা করলেন।
“হ্যাঁ, রসুলুল্লাহ (সঃ)।”
“কুমারি না বিধবা?”
“বিধবা।”
“কুমারি দেখে বিয়ে করতে যাতে তুমিও ওর সাথে খেলতে, সেও তোমার সাথে খেলতো!”
“ইয়া রসুলুল্লাহ (সঃ), আপনি তো জানেন, আমার এই নয় বোন সবাই ছোট। আমি চাইনি, ঠিক তাদের বয়সি কেউ আসুক আমার ঘরে।আমি তাই এমন একজনকে এনেছি যে তাদের অভিভাবক হবে, খেলার সাথি না।”
“ওহ, তাহলে তো ঠিক কাজ ই করেছো।”
রসুলুল্লাহ (সঃ) জাবিরকে উট থেকে নামতে বললেন এবং নিজেই উটের উপর বসলেন। উটটি তখন সবচেয়ে সবল উটে পরিণত হয়ে গেলো (সুবহানাল্লাহ)।এরপর রসুলুল্লাহ (সঃ) এতটা দ্রুত গতিতে ছুটলেন যে পুরো কাফেলার সামনে চলে গেলেন। রসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, “ইয়া জাবির, উটটা আমার কাছে বিক্রি করে দাও।”
জাবির (রাঃ) হতবাক হয়ে বললেন, “ইয়া রসুলুল্লাহ (সঃ), এটা আপনাকে উপহার দিলাম।” কিন্তু রসুলুল্লাহ (সঃ) উপহার গ্রহণ করবেন না, বরং কিনবেন বলে জোরাজুরি করতে লাগলেন। অবশেষে, তিনি রাজি হলেন। রসুলুল্লাহ (সঃ) এক দিরহাম মূল্য দিলেন। জাবির (রাঃ) বললেন, “ইয়া রসুলুল্লাহ (সঃ), বেশি কম হয়ে যায় তো!” রসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, “আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুক, ২ দিরহাম!” জাবির (রাঃ) আবারও বললেন, “কম হয়ে যায়!” এভাবে প্রায় ২৫বার দরকষাকষি করলেন।
এই ২৫বার রসুলুল্লাহ (সঃ) জাবিরের জন্য বলেছিলেন, “আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা তোমাকে ক্ষমা করুক।” আর কোনো সাহাবির (রাঃ) জন্য রসুলুল্লাহ (সঃ) এভাবে বলেননি। অবশেষে এক উকিয়াহ দাম ঠিক হলো, তবে জাবির (রাঃ) শর্ত দিলেন, তিনি এই উটে করে মদিনায় নিজ গৃহে যাবেন এরপর রসুল সঃ কে দিয়ে দিবেন। রসুলুল্লাহ (সঃ) রাজি হলেন। রসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, “রাতে গৃহে প্রবেশ করোনা, সকালে করো, যাতে তোমার পরিবার তোমার আসার খবর পেয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে।”
পরের দিন সকালে মদিনার মসজিদে নববীর পাশেই খুঁটির সাথে জাবির (রাঃ)-এর উট বাঁধা ছিল। রসুলুল্লাহ (সঃ) দেখলেন, উটটি কার? জাবিরের! “ইয়া রসুলুল্লাহ (সঃ), উট দিতে এসেছে!” জাবির কোথায়? জাবির (রাঃ) আসলেন এবং বিলাল (রাঃ)-কে বললেন, এক উকিয়াহ সাথে আরও বাড়িয়ে দিতে। যখন জাবির দিরহাম হাতে নিয়ে চলে যেতে চাইলেন, তখন রসুলুল্লাহ (সঃ) বললেন, “এই উটটি তোমাকে উপহার দিলাম!”
গতকালই যার শুধুমাত্র এই দুর্বল উট ছিল, আজ তাঁর সবল উট সাথে ব্যাগ ভর্তি দিরহাম! রসুলুল্লাহ (সঃ) এতটা কেয়ার করতেন সাহাবিদের যে তাই এই সাহাবিদের সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন এই রসুলুল্লাহ (সঃ)। সকল যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ লিডার।
বিদ্রঃ উল্লেখ্য, হাদিসের টেক্সট হুবুহু নাও মিলতে পারে তবে ভাব একিই। উপরের হাদিসটি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) এর হাদিস নামে অধিক প্রসিদ্ধ। প্রায় সকল সহিহ হাদিস গ্রন্থে উক্ত হাদিসটি লিপিবদ্ধ আছে।
লেখকঃ রিজওয়ান জাহান তন্ময়